লিপির লিপিস্টিক
মটর বাইকটা গ্যারেজে রেখে ক্লান্তভাবে কলিং বেলে টিপ দেয় রাজিব। সারাদিন চরম উত্তেজনার মধ্যে সময় কাটাতে হয়। রাজিব ভাবে মফস্বলই ভাল ছিল। এতো টেনশন ছিলনা। অবশ্য অনেক দিনের স্বপ্নছিল রাজধানীতে কাজ করার। কিন্তু রাজধানী যে সারাক্ষণ এমন উত্তেজিত অবস্থার মধ্যে থাকে তা কে জানতো। রাজিব ৩ বছর হয় পুলিশের জুনিয়র অফিসার হিসাবে চাকুরীতে জয়েন করেছে। প্রথমে জেলা শহরে পোটিং হয়। তখন থেকেই একটি চিন্তা কবে রাজধানীতে যেতে পারবো। গত ইলেকশনে বিএনপি জিতে পুলিশের মধ্যে এক বিরাট পরিবর্তন আনে।
আর সে পরিবর্তনেই রাজিব এখন রাজধানীতে। লিপি দরজা খুলে রাজিবকে দেখে সরে দাড়ায়। লিপি রাজিবের স্ত্রী। ওরই বেশী শখ ছিল ঢাকায় আসতে। ২ বছরের বিবাহিত জীবনে লিপির একটি মাত্র আশা ঢাকায় সংসার পাতা। সে আশা পুরণ হয়েছে কিন্তু রাজিবের সারা দিন রাত বাইরে থাকাটা সে সহজভাবে ভাবে মেনে নিতে পারছে না। স্বপ্নের সংসার গড়ে তুলেছে ঠিকই কিন্তু একাকিত্ব ওকে এরই মধ্যে বেশ অসহনীয় করে তুলেছে। রাজিব কোন কথা না বলে ঘরে ঢুকে নিজের জামা কাপড় খুলতে থাকে। লিপি দরজা বন্ধ করে রাজিবের পিছনে তোয়ালে হাতে দাড়িয়ে থাকে। রাজিব তোয়ালেটা নিয়ে বাথরুমে ঢোকে। লিপি তরকারী গরম দিয়ে এসে রাজিবের জামা কাপড় গুছিয়ে রাখতে গিয়ে দেখে রাজিবের জামার পকেটে অনেকগুলো পাঁচশত টাকার নোট। লিপি নোটগুলো হাতাতে থাকে। এমন সময় রাজিব বাথরুম থেকে বের হয়ে লিপিকে টাকা হাতাতে দেখে পা টিপে টিপে ওর পিছন দিয়ে হঠাৎ খপ করে ওর হাত ধরে ফেলে। লিপি চমকে উঠে। এবার তোমাকে হাতে নাতে ধরে ফেলেছি। তোমাকে আর কেউ বাচাঁতে পারবে না। থানায় যেতে হবে। রাজিব গম্ভির স্বরে বলে। সেকি, আমাকে তুমি থানায় নিয়ে যাবে? কেন? কেন বুঝতে পারছো না? একজন পুলিশ অফিসারের পকেট মেরে আবার বলছো কেন? এ ব্যাপারে কোন আপোষ করা যাবে না। রাজিব গম্ভির স্বরেই বলে। থানায় নিয়ে গেলে কি তোমার সম্মান বাড়বে? করুন স্বরে বলে লিপি।
অবশ্যই বাড়বে। বর্তমান প্রধান মন্ত্রী দ্ব্যার্থহীন ভাষায় বলেছেন- “অপরাধী যেই হোক তাকে আইনের হাতে সপর্দ করতে হবে।” তোমাকে থানায় দিলে আমার সততা এবং কাজের প্রতি নিষ্ঠার জন্য প্রধান মন্ত্রীর কাছ থেকে গোল্ড মেডেলও পেতে পারি। কারণ আমি আমার নিজের ন্ত্রীকেও ক্ষমা করিনি। আমার কাছে দায়িত্বের চেয়ে স্বজন প্রিতি বড় নয়। তা অবশ্য ঠিক। কাল প্রত্যেকটি সংবাদপত্রের হেড লাইন হবে “একজন সৎ পুলিশ কর্মকর্তার সততার দৃষ্টান্ত”। রাতারাতি তুমি হিরো হয়ে যাবে। সবাই তোমাকে দেখে সমীহ করবে। তবে এর উলটো পিঠও আছে। তোমার এই সুকির্ত্তির কথা খুব তাড়াতাড়ী সবাই ভুলে যাবে। তোমাকে দেখে সবাই বলবে ঐ দেখো একজন মহিলা চোরের স্বামী যাচ্ছে। তখন তোমার কেমন লাগবে? কি বললে? মহিলা চোর? একজন পুলিশ অফিসারের স্ত্রী মহিলা চোর? অবশ্যই। তুমিতো তাই বলেই আমাকে থানায় দেবে। শোন তার চেয়ে এই নাও এটা রেখে আমাকে ছেড়ে দাও। তাহলে তোমাকে আর কেউ ঐ অপবাদ দিতে পারবেনা। সেকি তুমি আমাকে ঘুষ দিচ্ছ। একজন পুলিশ অফিসারকে তুমি রিশওয়াত দিয়ে তার কর্তব্য থেকে দুরে সারাতে চাচ্ছ। তুমি আমাকে চেন না? চিনি বলেই তো বলছি। এগুলো নিয়ে আমাকে ছেড়ে দাও। আচ্ছা ঠিক আছে নাও আরও দিচ্ছি। এবারতো চলবে? লিপি ওর হাতের টাকা থেকে অনেকগুলো নোট এগিয়ে ধরে। সাথে সাথে ওর বুক থেকে আচল টা পড়ে যায় । লিপির পুস্ট দুদ দুটি স্পস্ট দেখতে পায় রাজিব । তুমি যখন এতো করে বলছো তখন কি আর করি। তাছাড়া তোমাকে থানায় দিলে আমারই অসুবিধা বেশী হবে। তাই এবারের মত ছেড়ে দিলাম।
কিন্তু একটি কথা ভাবিষ্যতে ধরা পড়লে কিন্তু আর ছাড়বো না। রাজিব একটু নমনিয় হয়ে বলে। ঠিক আছে, ঠিক আছে, ন্যাড়া বেল তলায় একবারই যায়। আমি আর কখনও তোমার হাতে ধরা পড়বো না। সাবধানেই কাজ সারবো বলে লিপি রাজিবের হাত থেকে তোয়ালেটা নিয়ে ওর খোলা বুকে একটি আলতো কিল দিয়ে রাজিব ওকে ধরার আগেই দ্রুত সরে যায়। একটু দুরে গিয়ে ফিরে তাকিয়ে বলে – খেতে আস। রাজিব লিপির এই দুষ্টমিভরা কন্ঠস্বর বুঝতে পারে। ওকে একটু আদর করার জন্য ধরতে গিয়ে ধরতে পারেনি। তবে ওর চুল ধরে ফেলেছিল কিন্তু লিপির চঞ্চলতায় চুল হাত থেকে বেরিয়ে যায়। ওর চুলের মিষ্টি গন্ধ রাজিবকে বন্য করে তোলে। লিপির চলে যাওয়া ছন্দের দিকে একমুহুর্ত তাকিয়ে পা বাড়ায় ডাইনিং এর দিকে। মনে মনে বলে রাতে এর শোধ তুলবো ।
No comments:
Post a Comment